নদী ভাংগনের পরও থেমে থাকেনি মাকসুদা বেগম

নদী ভাংগনের পরও থেমে থাকেনি মাকসুদা বেগম

            নদীভাঙ্গন কবলিত এলাকা বাবুগঞ্জ উপজেলার রাকুদিয়া গ্রামে জন্ম একটি সংগ্রামী নাম মাকসুদা বেগম। নদী ভাঙ্গনের ফলে মাকসুদার পরিবার বসতভিটাহীন হয়ে পড়ে। এরপর তাদের অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয়। বাবার আর্থিক  অস্বচ্ছলতা এবং পারিবারিক ও সামাজিক নানা কারণে প্রাথমিকের গন্ডি পেরিয়ে আর হাইস্কুলে ভর্তি হওয়া সম্ভব হয়নি। নদ-নদী,খালবিল অরন্য ও প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ বরিশালের উজিরপুর উপজেলার দঃ শিকারপুর গ্রামের মীরাবাড়ির বাসিন্দা আজিজুল হক মীরার  সংসারে অনিচ্ছা সত্বেও চলে আসতে হয় মাকসুদা বেগমকে। স্বামী একজন কৃষক এ অবস্থায় দু:খ কষ্টের মধ্য দিয়ে সংসার জীবনের যাত্রা শুরু হয় তাদের। সংসারে নতুন মুখ আসায় নুন আনতে পান্তা ফুড়ায় অবস্থায় স্বামীর পাশাপাশি নিজেকেই ধরতে হয় হাল। ছয় সদস্যর সংসারে অন্ন যোগাতে কৃষিকে অবলম্বন করতে হয় তাকে। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দঃ শিকারপুর এসএফজিতে সবজি উৎপাদনের জন্য ১৫০০০/- টাকা ঋণ পায় ব্রাক,উজিরপুর শাখা থেকে হাতে আরও ছিল ৩০০০/- টাকা। স্বামীর বসতভিটার ৩ শতাংশ জমির পাশাপাশি ২ জৈষ্ঠ্যর ভিটাটির উপর নজর পড়ে মাকসুদা বেগমের। তিনি শুরু করেণ করলার চাষ। স্থানীয় বাজার থেকে লালতীর কোম্পানীর টিয়া জাতের বীজক্রয় করে চাষাবাদ শুরু করেণ। উপজেলা কৃষি অফিস তাকে প্রদান করেণ প্রশিক্ষণ। স্থানীয় উপ-সহকারীর পরামর্শে কাজ শুরু করেণ তিনি। করলার ফলন আসে বাম্পার। তিনি ফলন পান ১২০০ কেজি যা বিক্রি করেন ৪৮০০০/-টাক(প্রতি কেজির মূল্যে ৪০টাকা হারে) খরচ বাদে করলায় তার লাভ হয় ৩২০০০ টাকা,এর পর একই জমিতে তিনি কুমড়া করে লাভ পান ২০,৫০০/- টাকা,কুমড়ার পরে লাউ করে পান আরও ২৯০০০ টাকা। তার উৎপাদিত ফলন পাইকাররা ও স্থানীয়রা এসে বাড়ি থেকে নিয়ে যায় সে তার উৎপাদিত সবজিকে বিষমুক্ত রাখতে ফেরেমোন ফাঁদ ব্যবহার করেন। এরপর তিনি আরও ৩০ শতক জমি লিজ নিয়ে সবজি চাষ করেন। যেখানে তার ঋণ নেয়ার আগে মাসিক আয় ছিল ৬০০০ টাকা এখন এটি বেড়ে ১৮০০০ টাকা হয়েছে।

           বর্তমানে আমার রয়েছে ১ টি দুধের গরু,২ টি হালের গরু,৩ টি ছাগল,৪০ টি হাঁস ও মুরগি ইতিমধ্যে ২ টি গরু বিক্রি ও সবজির বিক্রির সঞ্চিত অর্থ দিয়ে আমার মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। বড় মেয়ে এসএসসি পাশ করেছে,বড় ছেলে হাইস্কুলে লেখাপড়া করছে। জরাজীর্ণ বাড়িটি আজ দোতালা কাঠের ঘর। আজ আমি ছেলে মেয়ের পড়াশুনা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদা মেটোতে সক্ষম। ২৫ জন সদস্য/সদাস্যার সমন্বয়ে গড়া দঃ শিকারপুর এফএফজি আজ পরিনত হয়েছে একটি সমিতিতে যার সভাপতিত্বের চেয়ারে সবাই বসিয়েছে আমাকে। আমার আয় বাড়ার সাথে সাথে বেড়েছে সামাজিক স্বীকৃতি ও মর্যদা। আমার অনুকরণে আজ গ্রামটি পরিনত  হয়েছে একটি সবজি গ্রাম রূপে যেখানে নারী-পুরুষ সবাই কমবেশী বসতবাড়িতে করছে সবজি চাষ। আমি স্বপ্ন দেখি আমার সমিতিটি একটি নিজস্ব জমিতে স্থায়ীভাবে  আবাস পেয়েছে। অমি মনে করি নারীকে যদি পুঁজি,উৎসাহ,প্রশিক্ষণ দিয়ে যে কোন কাজে নামানো হয় সে অবশ্যই পুরুষের চেয়ে বেশী সফলতা লাভ করবে। নিজের অদম্য ইচ্ছা থাকলে যে কেউ সফল হতে পারে।