HYV T.Amon cultivation in Jute field as relay crop

HYV T.Amon cultivation in Jute field as relay crop

                                     রিলে ফসল হিসাবে পাটের জমিতে উফশী আমন ধান চাষ
                                                                 কৃষিবিদ গোপাল কৃষ্ণ দাস, ডিটিও, ডিএই, ফরিদপুর।
         এদেশের অনেক এলাকাতেই দেশী আমন ধানের জমিতে ধান কাটার পূর্বেই খেসারী, মশুর, সরিষার বীজ বপনের প্রচলন আছে। এতে করে খেসারী, মশুর, সরিষার আবাদের সময় এগিয়ে নিয়ে আসা যায়। জমিতে কোন ফসল থাকা অবস্থায় অন্য একটি ফসল বপন করাকে রিলে ফসল আবাদ বলা হয়। আবার অনেক এলাকাতেই পাটের জমিতে মিশ্র ফসল হিসাবে দেশী আমন ধানের চাষের প্রচলন ছিল। কিন্তু ফরিদপুর জেলার ৯ টি উপজেলার কৃষকগন তাদের পাটের জমিতে রিলে ফসল হিসাবে উফশী আমন ধানের চাষ করে আসছে এবং তারা রোপা আমনে ভাল ফলন পাচ্ছেন। এতে করে রোপা আমনের উৎপাদন খরচ কমছে এবং একই জমিতে ৩ টি ফসল আবাদ করা সম্ভব হচ্ছে। ১৯৯৫-৯৬ সালের দিকে প্রাথমিকভাবে ফরিদপুর জেলার ভাংগা উপজেলার ৩ টি ইউনিয়নের চাষীরা (নুরুল্লাগঞ্জ, মানিকদহ, হামিরদী ) নিজ উদ্দ্যোগে তাদের পাটের জমিতে এ কার্যক্রম শুরু করেন। পরবর্তীতে তাদের সফলতায় অন্যান্য কৃষকগনও তাদের পাটের জমিতে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করেন। ক্রমে এ প্রযুক্তি পার্শ্ববতী উপজেলার কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে ফরিদপুর জেলার ৯ টি উপজেলায়  আবাদকৃত ৬০,২৫০ হেক্টর রোপা আমনের মধ্যে প্রায় ২৭,৫০০ হেক্টর জমিতে কৃষকগন এ প্রযুক্তি ব্যবহার  করে সফলতা পেয়েছেন। যা মোট রোপা আমন আবাদের ৪৬ শতাংশ । এ পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে রোপা আমনের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ পদ্ধতিতে ধান চাষের ফলে কৃষকদের উৎপাদন খরচ অনেক কমছে। প্রথমদিকে কৃষকগন তাদের বোরো মৌসুমে উৎপাদিত ব্রিধান২৮, ব্রিধান২৯ দিয়ে পাটের জমিতে রিলে ফসল হিসাবে রোপা আমন চাষ করত। কারণ হিসাবে তারা মনে করত এ প্রযুক্তি বন্যা প্রবন এলাকায় অনেকটাই ঝুকিপূর্ণ। একটু বন্যা হলেই চারা ডুবে যাবে। তাই তাদের ঘরে সংরক্ষিত ব্রিধান২৮, ব্রিধান২৯ বোরো ধান রিলে হিসাবে পাটের মধ্যে বপন করত। বর্তমানে উফশী রোপা আমনের জাতই বেশী ব্যবহার করছে।
জমির উপযোগীতা ঃ
পাটের আবাদ হয় এমন সব ধরনের জমিতে এ পদ্ধতিতে উফশী বোনা আমনের রিলে ফসল আবাদ সম্ভব নয়। উঁচু জমি, যেখানে বর্ষার পানি সাধারণত উঠেনা এবং উঠলেও বর্ষায় ১ ফুটের বেশী পানি হয় না এমন জমিতেই এ পদ্ধতিতে পাটের জমিতে সাথী ফসল হিসাবে উফশী বোনা আমন চাষ করা সম্ভব।
শস্য পর্যায় ঃ  গম/ডাল/পেঁয়াজ--পাট +উফশী বোনা আমন ( পাটের রিলে  ফসল)।
উফশী ধানের জাত ঃ ব্রিধান৩৩, ব্রিধান৩৯, বিনা ৭,
উৎপাদন প্রযুক্তি ঃ
১৫ চৈত্র হতে ৩০ চৈত্র ( ১ এপ্রিল হতে ১৫ এপ্রিল ) সময়ে পাট বীজ বপন করা হয়। বৃষ্টির অভাবে সেচ প্রয়োগ করেও পাট বীজ বপন করা যায়। পাট বপনের পূর্বের ফসলে (গম,পেঁয়াজ ) যদি পূর্ণ মাত্রায় রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয় তবে পাট বপনের সময় অর্ধেক মাত্রায় টিএসপি ও পটাশ সার ব্যবহার করা হয়। আর পাটের জমিতে পূর্ণ মাত্রায় রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হলে উফশী বোনা আমন ক্ষেতে  টিএসপি ও পটাশ সারের প্রয়োজন হয় না। পরে পাট কাটার পর উপরি সার প্রয়োগ হিসাবে একর প্রতি ৭০ কেজি  ইউরিয়া ও ২০ কেজি  পটাশ সার ব্যবহার করা হয়।
পাট বপনের ২.৫ - ৩ মাস পর পাটের উচ্চতা যখন ৬-৭ ফুট হয় তখন পাট বাছাই করে অপেক্ষাকৃত ছোট পাট কেটে পাতলা করে দেয়া হয়। এই পাটকে স্থানীয় ভাষায় বাছ পাট বলা হয়।এই বাছ পাট থেকে উৎকৃষ্ট মানের আঁশ পাওয়া যায়। এই পাট বিক্রি করেও কৃষকরা লাভবান হছেন। বাছপাট কাটার সময় একর প্রতি ১৮-২০ কেজি অংকুরিত উফশী আমন জাতের বীজ পাটের মধ্যে ছিটিয়ে বুনানো হয়। পাটের ভিতর ঢুকে পাট গাছের নীচ দিয়ে ছিটিয়ে বীজ বপন করা হয়। পাট লাইনে বপন করা হলে এ সময় ধান বীজ বুনা সহজ হয়।এ সময় মাঝে মাঝে বৃষ্টিপাত হওয়ায় ধান বীজ সহজেই মাটিতে লেগে যায়।  
ধানের বীজ বুনার ২০-২৫ দিনের মধ্যে পাট গাছ কাটা হয়। পাট কাটার সময় ধান গাছের উচ্চতা ৫ ইঞ্চি থেকে ৮ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে। পাট কাটার সময় খেয়াল রাখতে হয় যেন ধানের চারা কাটা না যায়। পাট কাটার সময় ধানের চারা পায়ের চাপে শুয়ে পড়লেও চারার তেমন ক্ষতি হয় না।




পাট কাটার ১০-১৫ দিনের মধ্যে একবার আগাছা দমন করে প্রথম বার একর প্রতি  ৩৫ কেজি হারে ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করা হয়। দ্বিতীয় বার আবার ১৫-২০ দিন পর আগাছা দমন করে একর প্রতি  ৩৫ কেজি হারে ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করা হয়। দ্বিতীয়বার ইউরিয়া উপরি প্রয়োগের সময় একর প্রতি ১৫-২০ কেজি হারে পটাশ সার উপরি প্রয়োগ করা যায়। বর্ষার পানি জমিতে কম জমে থাকলে ২ বার আগাছা দমন করার দরকার হয়। আর জমিতে সব সময় পানি জমে থাকলে ১ বার আগাছা দমনের প্রয়েজন হয়। সম্পুরক সেচের ব্যবস্থা থাকলে ভাল হয়, যাতে করে খরা হলে জমিতে সেচ প্রয়োগ করা যায়।
 ফলন ঃ
সর্বেচ্চ ফলন ঃ ৩.৫  টন/হেক্টর ( ধানে) ,  
মধ্যম ফলন ঃ ৩.০ টন/হেক্টর ( ধানে)   ,
নি¤œ ফলন   ঃ ২.৫ টন/হেক্টর ( ধানে )।

               পাটের জমিতে রোপন ও রিলে পদ্ধতিতে উফশী ধান বপনের তুলনামূলক সুবিধা ঃ
 রোপন পদ্ধতি                                                                    বপন পদ্ধতি
১। জমি চাষকরে ধান রোপন করা হয় বলে              ১। জমি চা ষ করার প্রয়োজন হয় না বলে উৎপাদন খরচ কম।
  উৎপাদন খরচ বেশী।
২। ফসলের জীবনকাল ১০-১২ দিন বেশী।             ২। ফসলের জীবনকাল ১০-১২ দিন কম।
৩। ফসলের জীবনকাল বেশী বলে ধান কেটে গম       ৩। ফসলের জীবনকাল কম বলে ধান কেটে গম আবাদ করা যায়।
 আবাদ নাবী হয়ে যায়।
৪। বীজতলা থেকে চারা তোলা ও রোপন খরচ বেশী।  ৪। বীজতলা থেকে চারা তোলা ও রোপন খরচ নাই।  
৫। ধানের ফলন কিছুটা বেশী।                           ৫। ধানের ফলন কিছুটা কম।
৬। রবি ফসল আবাদের সময় মাটি কিছুটা শক্ত থাকে। ৬। রবি ফসল আবাদের সময় মাটি বেশী ঝুরঝুরে হয়।